Tuesday, July 25, 2023

কুষ্টিয়া জেলা ।

 

 

আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর জেলা কুষ্টিয়া নিয়ে।

 

কুষ্টিয়া জেলার পরিচিতি
                                                                পাকশি রেল সেতু

বাংলাদেশের দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্যতম জেলাটি হচ্ছে কুষ্টিয়া জেলা।

কুষ্টিয়া জেলাটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।এই জেলার সংসদীয় আসন মোট ৪টি।

জেলার আয়তন মোট ১৬২১ বর্গ কি.মি. বা ৬২৬ বর্গমাইল।

জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৪,৬৬,৮১১ জন।জন সংখ্যার ঘনত্ব ১৫০০ প্রতি বর্গ কি.মি.তে।

এই জেলার মোট স্বাক্ষরতার হার ৮৬.৩৭ জন।

কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস:

বহু বছর আগে এই জেলাটি ভারতের নদীয়া জেলার (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ) অন্তভুক্ত ছিল।তখন বাংলাদেশ নামক দেশের জন্ম হয়নি।

এরপর যখন বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিল তখন এটি রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার মহকুমা থানা হিসেবে ছিল।

কোম্পানী আমলে কুষ্টিয়া জেলাটি যশোর জেলার অধীনে ছিল।

১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়ায় একটি পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই কুষ্টিয়া জেলাটি কিন্তু প্রাচীন কোনো নগর নয়।সম্রাট শাহ জাহানের রাজত্বকালে এই জেলাতে একটি নদী বন্দর তৈরী হয়েছিল।ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীটি এই নদী বন্দরটি বেশী ব্যবহার করত।তারপর এখানে আস্তে আস্তে নীল চাষী নীলকরদের নগরায়ন শুরু হয়।

তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজধানী কলকাতার সাথে ১৮৬০ সালে  এই জেলার রেল যোগাযোগ শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে যখন ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে যায়  তখন কুষ্টিয়া পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।আর তখনকার সময়ে এই জেলার মহকুমাগুলো ছিল মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা কুষ্টিয়া সদর। বাংলাদেশের প্রথম রেল স্টেশন কুষ্টিয়া জেলায় তৈরী হয়েছিল।আর এই রেল স্টেশনের নাম ছিল জগতি রেলওয়ে স্টেশন।এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়কুমারখালী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পৌরসভা হলো কুষ্টিয়া পৌরসভা এবং বাংলাদেশের তের তম বৃহত্তম শহর।এই জেলাটি বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত।

এছাড়াও এই জেলার তিলের খাজা দেশ সেরা স্থানের রয়েছে।যেকোনো লোক এই তিলের খাজার নাম মুখে নিলে প্রথমেই যে  জেলার নাম অটোমেটিক উচ্চারণ করে সেই জেলাটির নাম অবশ্যই কুষ্টিয়া জেলা।

এই জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ব্যাপক, আমি আজকে আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই জেলার বিভিন্ন স্থান, বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন স্থাপনা, জেলার ইতিহাস, সরকারী প্রতিষ্ঠান, জেলার আয়তন, জেলার মানুষ নিয়ে আলোচনা করব।

কুষ্টিয়া জেলার অবস্থান:

এই জেলার উত্তরে রাজশাহী, নাটোর পাবনা জেলা। দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদাহ জেলা।

পূর্বে রাজবাড়ী জেলা এবং পশ্চিমে মেহেরপুর জেলা ভারতের মেহেরপুর জেলা অবস্থিত।

বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ, তাই এই দেশের প্রতিটি জেলার মধ্য দিয়ে কম বেশী নদী বয়ে গেছেই। এই জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া নদীসমূহ হলো; পদ্মানদী, গড়াই নদী, মাথাভাঙ্গা নদী, কালীগঙ্গা নদী কুমার নদ।

বাংলাদেশের সুনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই জেলার নামকে আরও বেশি গৌরবান্বিত

করেছেন। স্বাধীনতার পর দেশে প্রথম যে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় তাও এই জেলায় অবস্থিত।

আর এই প্রতিষ্ঠানটির নাম হচ্ছে  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া জেলার পরিচিতি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের শিক্ষার জন্য বিশেষ অবদান  রাখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়,বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় সহ দেশের বড় বড় বিশ্বিদ্যালয়ের মধ্য অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।

এছাড়াও আরেকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেটির নাম হলো রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়।

এছাড়াও অনান্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে;

২টি মেডিকেল কলেজ। প্রথমটি সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আর দ্বিতীয়টি বেসরকারী (সেলিমা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল) মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এছাড়াও সরকারী মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ১টি রয়েছে। বেসরকারী  বা ম্যাসট রয়েছে মোট ৫টি। এগুলো হলো;

. আলো মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট স্কুল . ডাঃ লিজা- ডাঃ রতন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট স্কুল, . স্পেশালাইসড মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট স্কুল, . লালন শাহ মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট স্কুল, . পদ্মা গড়াই মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট স্কুল।

সরকারী পলিটেকনিক রয়েছে ১টি এবং বেসরকারী পলিটেকনিক রয়েছে মোট ১০টি।

কুষ্টিয়া জেলায় মোট ৯টি সরকারী কলেজ রয়েছে।

এগুলো হলো; . কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ,. কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজ, . হোসেনাবাদ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, . কুষ্টিয়া সরকারী সিটি কলেজ, . আমলা সরকারী কলেজ, . খোকশা কলেজ,. কুমারখালী সরকারী কলেজ, . কুষ্টিয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ,. ভেড়ামারা সরকারী মহিলা কলেজ।

বেসরকারী কলেজ আছে মোট ৩০টি।

জেলা স্কুল ১টি; কুষ্টিয়া জেলা স্কুল। সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় আছে মোট ৩টি। বেসকারী উচ্চ বিদ্যালয় আছে মোট ১৭৩ টি। বেসরকারী নি¤œ বিদ্যালয় আছে মোট ৩৮টি।

সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোট ৩৩০ টি। বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোট ২৭৫টি। কিন্ডারগার্ডেন আছে মোট ৩৯০ টি, মাদ্রাসা আছে মোট ৩৭টি। কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে মোট ২টি। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে মোট ২টি এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যালয় রয়েছে  ১টি।

বাংলাদেশের সংস্কৃতির রাজধানী কিন্তু বলা হয় এই কুষ্টিয়া জেলাকেই। বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম শিল্পকলা একাডেমি এই জেলাতেই

এছাড়াও শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়েও এই জেলাটি বহু গুরুত্বপূর্ন।

কুষ্টিয়া জেলা শহর ছাড়াও এই জেলার দুইটি উপজেলা শিল্প কারখানার জন্য বর্তমানে অনেক এগিয়ে গেছে। আর এই দুইটি উপজেলা শহর হলো কুমারখালী ভেড়ামারা এই অঞ্চলে ২টিতে বিসিক শিল্প গড়ে ওঠেছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কিন্তু ভেড়ামারাতেই।

বাংলাদেশের সব জেলার চাইতে সুন্দর ভাষায় কথা বলে এই কুষ্টিয়া জেলার মানুষ।বাংলাদেশের বাংলা ভাষার প্রমিত রুপটি এখানে গেলে পাওয়া যায়।

মানে আপনি যদি খাঁটি বাংলা ভাষার কথা শুনতে চান তবে কুষ্টিয়া জেলাতে ঘুরে আসুন।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা এই জেলা থেকেই।

এই জেলার প্রশাসনিক পরিচয় এখন তুলে ধরব;

কুষ্টিয়া জেলাটি মোট ৬টি উপজেলা, ৭টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৫৭টি ওয়ার্ড, ৭০টি মহল্লা, ৭১ টি ইউনিয়ন, ৭১০টি মৌজা এবং ৯৭৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।

আর এই ৬টি উপজেলা হচ্ছে; . কুমারখালী উপজেলা, .কুষ্টিয়া সদর, .খোকশা উপজেলা, .দৌলতপুর সদর, .ভেড়ামারা উপজেলা .মিরপুর উপজেলা।

আর ৫টি পৌরসভা রয়েছে সেগুলো উপজেলার একই নামে।

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। তাই দেশের যেখানে যাবেন আপনি কৃষিকে খুঁজে পাবেনই।

বাংলাদেশর অনান্য জেলার মতোই কুষ্টিয়া জেলায় কৃষি ব্যাপক পরিসরে রয়েছে।

এই জেলায় প্রধানত ধান,পাট, আখ, ডাল তৈল বীজ ইত্যাদি চাষ হয়।তবে ইদানীং এই জেলাটিতে পান তামাকের ব্যাপক পরিমাণে চাষ হচ্ছে। এছাড়াও মহিষ কুন্ডির চরে অল্প পরিমানে বাদাম চাষ হয়ে থাকে।

এই জেলার অর্থনীতি কেবল কৃষির উপরই নির্ভরশীল নয়।

এই জেলায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে, যা এই কুষ্টিয়া জেলার অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছেন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান সমূহের নাম হচ্ছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, নাসির টোবাকো লিমিটেড, দ্যা ইউনাইটেড ঢাকা টোবাকো, পারফেক্ট টোবাকো দেশের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক তার তৈরির কারখানা বিআরবি ক্যাবলস লিমিটেড এই কুষ্টিয়া জেলাতেই অবস্থিত। এছাড়াও আছে ফেব্রিক্স শিল্প, এবং চাউলের মিল।

কুষ্টিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিমান; বৃহৎ শিল্প ১২০টি, মাঝারী ২৩০টি, ক্ষুদ্র শিল্প ,২১২টি কুটির শিল্প ২১,৮৩৭টি।

কুষ্টিয়া বাংলাদেশের একটি প্রাচীন জনপদ। অনেক পূর্বে এটি নদীয়া জেলার মহকুমা ছিল।পরবর্তী সময়ে এটি জেলায় পরিনত হয়। এই জেলায় ভ্রমনের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে।

সেই দর্শনীয় স্থানসমূহের নামগুলো হলো; . রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী

কুষ্টিয়া জেলার পরিচিতি
               রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী

এই কুঠিবাড়ীটি অবস্থিত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে। এখানে রবীন্দ্রনাথের অনেক স্মৃতি বিজড়িত জিনিসপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। . ফকির লালন শাহ এর মাজার-

কুষ্টিয়া জেলার পরিচিতি
লালন শাহ এর মাজার

বাউল ফকির লালন শাইজিঁর মাজারটি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের ছেউড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। . টেগর লজ- এটি একটি দোঁতলা ভবন। এই ভবনটি কুষ্টিয়া জেলা শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত। . পরিমল থিয়েটার- এটি বর্তমানে একটি শপিং মল হিসেবে রয়েছে। পূর্বে এটি ছিল কুষ্টিয়া শহরের স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ। . মীর মোশারফ হোসেনের বাস্তভিটা- মীর মোশারর হোসেন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যানিক। তাহার বাস্তভিটা কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ায় অবস্থিত। . পাকশি রেল সেতু- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতুটি কিন্তু কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলায় অবস্থিত। . শেখ কামাল স্টেডিয়াম- বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটি বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলায় নির্মিত হয়েছে। যা মোট ১৩ একর জমির মধ্যে তৈরী হবে এবং ২০২৩ সালের মধ্যেই এটি উদ্বোধন হতে পারে। . কুষ্টিয়ার লালন শাহ সেতু, যা পাবনা জেলা এবং কুষ্টিয়া জেলাকে সংযুক্ত করেছে।  এছাড়াও এই জেলাতে আরও অনেক সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো; ঝাউদিয়া শাহী জামে মসজিদ, পদ্মা-গড়াই মোহনা,কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্তর,কুষ্টিয়ার বৃহত্তম বিল চাপাইগাছি নান্দিয়ার বিল,স্বস্তিপুর শাহী জামে মসজিদ, গোল্ডেন ভিলেজ খ্যাত কুষ্টিয়ার ২৫টি গ্রাম, বারাদি টেরাকোটা মঠ, খোকশা ফুলবাড়ি মঠ, গড়াই পাড়, শেখ রাসেল সেতু, উপমহাদেশের একমাত্র বস্ত্রকল মোহিনী মিল এই জেলাতেই অবস্থিত।

ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের শহর কুষ্টিয়া জেলায় আপনাকে ভ্রমনের জন্য দাওয়াত রইল।

কুষ্টিয়া জেলার পরিচিতি


আপনার চোখে দেখা অদেখা, জানা এবং অজানা বাংলাদেশের সকল জেলাকে নিয়েই আমাদের এই লেখা।

আমাদের পোস্টে যদি কোনো ধরনের তথ্য ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন।আমরা আপনার পরামর্শ এবং অভিযোগ আন্তরিকতার সাথে দেখব।


Previous Post
Next Post

0 comments:

Thank you sharing for your comment