Wednesday, September 6, 2023

গাইবান্ধা জেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

গাইবান্ধা জেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার গাইবান্ধা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের আওতাধীন আরেকটি সুন্দর জেলা গাইবান্ধা জেলাকে নিয়ে।

এই জেলাটি দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এই জেলার পশ্চিমে রয়েছে রংপুর জেলা, জয়পুরহাট জেলা ও দিনাজপুর জেলা।পূর্বে রয়েছে যমুনা ও তিস্তা নদী এবং জামালপুর জেলা, উত্তরে রয়েছে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলা এবং দক্ষিণে জয়পুরহাট জেলা ও বগুড়া জেলা।

জনমুখে কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ৫২শত বছর আগে এই গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় বিরাট রাজার রাজধানী ছিল। আর এই বিরাট রাজার নাকি প্রায় ৬০ হাজার গাভী ছিল।আর সেই ৬০ হাজার গাভী যে স্থানে বেঁধে রাখা হতো  তার একটি নাম তখন প্রচলিত হয় গাইবান্ধা । আর সেই নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয় গাইবান্ধা। আর এই জেলাটি ১৮৮৪ সালের ১৫ই আগস্ট  রোজ বুধবার গাইবান্ধা জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

গাইবান্ধা জেলার প্রশাসনিক কোড ৫৫৩২।

জেলার আয়তনঃ গাইবান্ধা জেলাটির আয়তন ২১৭৯.২৭ বর্গ কি.মি. বা ৮৪১.৪২ বর্গ মাইল।

আর এই জেলার মোট জনসংখ্যা  ২৫,৬২,২৩২জন।এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা হলো ১২,৩৮,৬২১ জন এবং নারীর সংখ্যা ১৩,১৭,৯৪৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছে প্রায় ১৯৫ জনের অধিক। আয়তন অনুযায়ী এই জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কি.মি.তে প্রায় ১১০০ জন এবং প্রতি বর্গ মাইলে ২৯০০ জন।

ছোট জেলা হিসেবে এই জেলার ম্বাক্ষরতার হার মোটামুটি ভালই । এই জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৬.৮৭% । দেশের উত্তরাঞ্চলে তেমন বড় বড় এবং সুনামধন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নেই । যার ফলে এখানকার অধিকাংশ মানুষকে উচ্চ শিক্ষা নিতে ঢাকা শহরে আসতে হয়।

 

গাইবান্ধা জেলাটির মোট ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। আর এই উপজেলাগুলো হলো;

১. গাইবান্ধা সদর উপজেলা, ২. সাদুল্লাপুর উপজেলা, ৩. ফুলছড়ি উপজেলা, ৪. গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, ৫. পলাশবাড়ী উপজেলা, ৬. সাঘাটা উপজেলা এবং ৭. সুন্দরগঞ্জ উপজেলা।

এই জেলায় মোট ০৭টি থানা রয়েছে এবং ০৪টি পৌরসভা রয়েছে।

থানা গুলোর নাম হলো, ১. গাইবান্ধা সদর, ২. সাদুল্লাপুর, ৩. পলাশবাড়ী, ৪. সুন্দরগঞ্জ, ৫. গোবিন্দগঞ্জ, ৬. সাঘাটা ও ৭. ফুলছড়ি থানা।

আর চারটি পৌরসভার নাম হলো;

১. ‍গাইবান্ধা, ২. গোবিন্দগঞ্জ, ৩. পলাশাবাড়ী ও ৪. সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা।

গাইবান্ধা জেলায় মোট ৮১টি ইউনিয়ন রয়েছে এবং মৌজার রয়েছে মোট ১০৮২টি আর গ্রামের সংখ্যা মোট ১২৫০টি।

 

পুরাতন জমিদার বাড়ি

 অর্থনীতিঃ এই জেলাটি বিভাগীয় শহরের বাইরে অবস্থিত হওয়ায়  জেলাটিতে তেমন বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নি।যার ফলে এই জেলার প্রধান অর্থনীতি কৃষিকেই ধরা চলে। বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর একটি দেশ। এই দেশের মাটি অনেক উর্বর। যার কারণে এখানে বেশি বেশি কৃষি কাজ হয় এবং কৃষক ভালো ফসল পায়। এদেশের প্রায় ৯০% মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল, মানে তারা যেকোনোভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকেই। তাই এই গাইবান্ধা জেলাটিও ব্যতিক্রম কিছু নয়। এই জেলার প্রায় ৬,৭৮,৬০৬টি কৃষি পরিবার কৃষি কাজ করেই জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।এই জেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২,১৪,৩২৯ হেক্টর এর মধ্যে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১,৬০,২২৯ হেক্টর।ু আর এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারী এবং বৃহৎ কিছু শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

এছাড়াও এই জেলায় মোট ১১টি খাদ্য গুদাম রয়েছে।এই ১১টি খাদ্য গুদামের মধ্যে মোট ধারণ ক্ষমতা ৩৩,২৫০ মে. টন।

এর মধ্যে বৃহৎ শিল্প-প্রতিষ্ঠান ১টি, মাঝারী শিল্প-প্রতিষ্ঠান ২টি এবং ক্ষুদ্র শিল্প-প্রতিষ্ঠান আছে মোট ১৬২১টি।এই জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি স্থান কোচাশহর।এই কোচাশহর ইউনিয়নটি কুটির শিল্পে খুবই উন্নত। এই স্থানে ১৯৬০ এর দশক থেকেই বিভিন্ন ধরনের মোজা, মাফলার এবং সুয়েটার তৈরী হয়ে আসছে।

কিন্তু এই জেলার মানুষের আয় খুবই কম। বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা যায় এই জেলার মানুষের দৈনিক গড় আয় ৩৭০-৩৮০ টাকার মধ্যে।

গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে অনেকগুলো ছোট বড় নদ-নদী বয়ে গেছে ।তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নদ-নদীর নাম হলো;

১. ব্রহ্মপুত্র, ২. তিস্তা নদী, ৩. বাঙালী নদী, ৪. ঘাঘট ও ৫. যমুনা নদী। এই জেলার মধ্য দিয়ে এইসব নদী প্রবাহিত হওয়ার কারণে এই জেলার জমির মধ্যে পলি মাটি পড়ে চাষের জমি অনেক উর্বর হয়। যার কারণে জমিতে বেশি পরিমাণে ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে।

এছাড়াও এই জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৮৮টি বিল রয়েছে।

বাংলাদেশ গঠনে দেশের প্রতিটি জেলার মানুষের অবদানই রয়েছে। তেমনি গাইবান্ধা জেলার অনেক কৃতি ও গুনী মানুষ রয়েছে। যারা দেশেরে জন্য বিরাট অবদান রেখে গেছেন এবং এখন পর্যন্ত রেখে চলেছেন তাদের নামগুলো হলো;

১. আবু হোসেন সরকার - তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

২. বদিউল আলম - তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন মহান যোদ্ধা আর তার কৃতিত্বের জন্য তাকে দেশ স্বাধীনের পর বীর উত্তম উপাধীতে ভূষিত করা হয়।

৩. ফজলে রাব্বি মিয়া - তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার।

৪. আহমেদ হোসেইন - তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার কৃষি মন্ত্রী।

৫. রুবেল মিয়া - তিনি হলেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের একজন সুনামধন্য খেলোয়ার।

৬. শাহ্ আব্দুল হামিদ - তিনি গনপরিষদের প্রথম স্পিকার।

৭. মকবুলার রহমান সরকার - তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

৮. ফজলে রাব্বি চৌধুরী - তিনি বাংলাদেশ সরকারের ভূমি সংস্কার ও পূনর্বাসন মন্ত্রী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও জাতীয় পার্টির চেয়্যারম্যান।

৯. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস - তিনি একজন সাহিত্যিক।

১০. মোহাম্মদ হাসান আলী খান - তিনি বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সাবেক নৌ প্রধান।

এছাড়াও আরও অনেক ব্যক্তিত্বভাবান লোক এই জেলায় রয়েছে। যারা এই জেলার মানুষকে এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছেন।

গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয়  স্থানসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো।

প্রাকৃতিক বৈচিত্রের এই জেলায় অনেক সুন্দর সুন্দর স্থান রয়েছে। ইতিহাসের অনেক স্বাক্ষী এখনও এই জেলায় বিদ্যমান। আমরা এই জেলাকে দেখলে কয়েকশ বছর আগের ইতিহাস আমাদের সামনে মনে করিয়ে দেয়। কালের পরিক্রমায় এইসব ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

এখনও দেখা মিলে যেসব স্থানের তা হলো;


কাঠের সাঁকো

১. ড্রীমল্যান্ড পলাশবাড়ি সদর, ২. ড্রীম সিটি পার্ক সাঘাটা,৩.  প্রাচীন মাস্তা মসজিদ, ৪. নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, ৫. রংপুর সুগার মিলস লিমিটেড ( মহিমাগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ), ৬. ফুলপুকুরিয়া পার্ক গোবিন্দগঞ্জ, ৭. আলিবাবা থিম পার্ক সুন্দরগঞ্জ, ৮. ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার ফুলছড়ি, ৯. বালাসী ঘাট, ১০. কামারের হাট গোবিন্দগঞ্জ, ১১. পেরিমাধব জমিদার বাড়ি সাদুল্লাপুর, ১২. ঘেগার বাজার মাজার সাদুল্লাপুর, হযরত শাহ জামাল মাজার শরীফ সাদুল্লাপুর, ১৩. জামালপুর শাহী জামে মসজিদ, ১৪.গাইবান্ধা পৌর পার্ক, ১৫. এসকেএস ইন গাইবান্ধা, ১৬. রাজা বিরাট প্রসাদ গোবিন্দগঞ্জ ও ১৭. পাকড়িয়া বিল সাদুল্লাপুর, বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ।

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সমূহঃ

গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন সুনামধন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নিয়ে এখন আলোচনা করব।

এই জেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আছে তা হলো;

১.

 

 

Previous Post
Next Post

0 comments:

Thank you sharing for your comment