Wednesday, April 10, 2019

টাংগাইল জেলার বিখ্যাত সব জিনিস



আমাদের দেশের মানচিত্রে টাংগাইল নামক একটি ভূখন্ড আছে। আর এই জেলায় আছে অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত জিনিস। এই জেলার পোড়াবাড়ীর  চমচমের কথা শুনলে কার মুখে পানি না আসে। মিষ্টির রাজাখ্যাত এই পোড়াবাড়ীর চমচম। এই জেলার চমচম সারা দেশে সেরা।এই জেলাতে অন্য জেলার মানুষ বেড়াতে আসলেই সাথে করে  চমচম নিয়ে  যেতে কখনই ভূল করে না।টাংগাইল জেলার চমচম দেশর বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাহিরেও রপ্তানী করা হয়। এই  চমচমের ইতিহাস প্রায় ২শ বছরের। অর্থ্যাৎ বৃটিশ আমলের সময়কার এই পোড়াবাড়ীর চমচম। পোড়াবাড়ী টাংগাইল  শহর হতে প্রায় ৬ কি.মি. দূরে অবস্থিত। এই  পোড়াবাড়ী হলো ছোট্ট একটা গ্রাম। আর  এই গ্রামটি ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত। আর এই নদীটি ছিল যমুনা নদীর একটি শাখা নদী। পোড়াবাড়ীর চমচম তৈরি হত খাঁটি গরুর দুধ, চিনি ও ধলেশ্বরী নদীর পানি দিয়ে। আগেকার দিনে ব্যবসায়ীরা, রাজা-বাদশা, জমিদার, পাইকপোয়াদারা এই পোড়াবাড়ীর ঘাটে এসে লঞ্চ, স্টিমার ও কার্গো ইত্যাদির নোঙর ফেলত। আর তারা এখান হতে চমচম কিনে খেত এবং তারা এই চমচম তাদের সাথে করে নিয়ে যেতেন। পোড়াবাড়ীতে তখন মোট ৫০-৬০ টি চমচমের দোকান ছিল। চলত জম-জমাট ব্যবসা। কালের ধারাবাহিকতায় ধলেশ্বরী নদীটি ছোট হয়ে গেল যার ফলে আর এই নদীটি দিয়ে লঞ্চ, স্টিমার জাহাজ ইত্যাদি আর আসতে পারছিল না। 

ফলে ব্যবসায় দেখা দেয় বিরাট মন্দাভাব। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্য্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দোকান-পাট নিয়ে চলে আসে টাংগাইল শহরে।আর তারা শহরের পাঁচআনী বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলে তাদের ব্যবসা।আর  এখন সেই পোড়াবাড়ীতে মোট ২ টি চমচমের দোকান বিদ্যমান রয়েছে। আর বর্তমানে শহরের পাঁচআনী বাজারে আনুমানিক মোট ৩০-৩৫ টি চমচমের দোকান আছে। বর্তমানে শহরের  সেরা দোকানের তালিকায় আছে জয়কালী ও  গোপাল মিষ্টান্নোভান্ডার। এই জেলা শুধু চমচমেই বিখ্যাত নয়, আরও আছে বিশ্বসেরা টাংগাইলের তাঁতের শাড়ী। 

টাংগাইল তাঁত শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম পুরাতন একটি শিল্প। একটি প্রবাদ  
আছে  নদী-নালা খাল বিল গজারির বন,
টাংগাইলের শাড়ী তার গর্বের ধন।

টাংগাইল জেলার তাঁতীরা মূলত  ঐতিহ্যবাহী মুস্লিন তাঁতীদের বংশধর।তাদের আঁদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার ধামরাই ও চৌহাট্টায় এলাকায়।তারা জমিদারদের আমন্ত্রণে মূলত দেলদুয়ার, সন্তোষ ও ঘারিন্দা এলাকায় যায় এবং  পরবর্তিতে সেখানে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।শুরুতে তারা নকশা বিহীন শাড়ী তৈরি করত।১৯২৩-১৯২৪ সালে তাঁতের কাপড়ের নকশা পরিবর্তন করেন। ১৯৯২ সালে টাংগাইল জেলায় ১ লাখের অধিক তাঁত ছিল এবং ১৫০০০০ তাঁতি টাংগাইল সদর, নাগরপুর, কালিহাতি ও বাসাইল উপজেলায় বসবাস করতেন।  ২০১৩ সালের একটি শুমারীতে পাওয়া তথ্য মতে টাংগাইল জেলায় ঐ সময়ে ৬০০০০ তাঁত ছিল। আর তাঁতের ধরণ অনুযায়ী মোট তিন ধরনের তাঁত ছিল। এগুলোর নাম হলো: ১. পিট তাঁত, ২. টি পাওয়ার তাঁত ও ৩. চিওরঞ্জন তাঁত। পাতরাইল ইউনিয়নের বসাখ সম্প্রদায় সবচেয়ে পুরোনো সম্প্রদায়। যারা এখনও এই তাঁতের শাড়ী তৈরি করে যাচ্ছে। টাংগাইলের তাঁতের শাড়ী তার একক বৈশিষ্ট্য এর জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদ্বিত। 

এই শাড়ী তারা সপ্তাহে ২ দিন বাজিতপুর ও করটিয়া হাঁটে বিক্রি করেন। টাংগাইল শাড়ীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাড়ীগুলোর নাম হলো: ১. সুতি শাড়ী, ২. আধা-রেশমি শাড়ী ( হাফ সিল্ক শাড়ী), ৩. সফট সিল্ক শাড়ী, ৪. বালুচুরি শাড়ী, ৫. সুতি জামদানী শাড়ী, ৬. ডাংগ্য শাড়ী , ৭. টুইস্টেট-সুতি শাড়ী ও ৮. গ্যাস-মারচেন্ডাইয়ড শাড়ী উল্লেখযোগ্য।
টাংগাইলর তাঁতের শাড়ী বিশ্বের  বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। এই শাড়ী  ভারত, আমেরিকা, মধ্যপাচ্য ও উইরোপের বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানী হয়। বিশেষ করে ভারতে প্রতি সপ্তাহে ৫০০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাংগাইলের শাড়ী রপ্তানী করা হয়। 
এছাড়াও আছে দেশ সেরা  যমুনা সেতু।

এই সেতুটি  টাংগাইল জেলা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মাঝে সংযোগ গড়ে তুলেছে। অর্থ্যাৎ এই সেতুটি দেশের উত্তর বঙ্গের সাথে ঢাকার যোগাযোগ সূত্র  গড়ে তুলে।
আরও আছে মধুপুরের বিখ্যাত গড়। আছে মধুপুরের আনারস যা, আমাদের দেশসহ বাইরের অনেক দেশে রপ্তানি করা হয়।
আছে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। যা টাংগাইলের গোপালপুর উপজেলায় অবস্থিত।এই মসজিদের মোট ২০১ টি গম্বুজ রয়েছে।
এছাড়াও আছে অনেক জমিদার বাড়ি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহেড়া জমিদার বাড়ি মির্জাপুর, যা বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার । আছে ‍দেশের অন্যতম সেরা ক্যাডেট কলেজ, মির্জাপুর,
আছে আগেকার সময়ের দশ টাকার নোটের সেই আতিয়া মসজিদ, দেলদুয়ার।তাছাড়াও আছে দেশের ইতিহাসের সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব  মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী এর মাজার।
আছে দেশের অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।আরও আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর  কাদের সিদ্দীকি। আসলেই এই জেলার সাথে অন্য কোন জেলার তুলনা হয় না।
লেখায় ভূলক্রূটি থাকলে জানাবেন সংশোধন করা হবে।

Previous Post
Next Post

6 comments:

  1. সত্যিই টাংগাইলে অনেক বিখ্যাত এবং সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে।

    ReplyDelete
  2. তথ্যবহুল একটা ওয়েব সাইড,

    ReplyDelete

Thank you sharing for your comment