Thursday, April 18, 2019

এক নজরে সুন্দরবন


সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম সৌন্দর্যময় একটা জায়গা। এই বনটি ম্যানগ্রোভ বনভূমি নামেও পরিচিত। এটি পৃথিবীর মধ্যে সমুদ্র উপকূলবর্তী  বনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় । এই বনটি বঙ্গোপসাগর এর উপকূলে অবস্থিত। এই বনটির মোট আয়তন মোট ১০,০০০ বর্গ কি.মি.,র যার প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কি.মি. বাংলাদেশে অবস্থিত। আর বাকি অংশ অবস্থিত ভারতে।এই বনভূমিকে নিঃসন্দেহে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি হিসেবে ধরতে পারি। এই সুন্দরবন আমাদের দেশের জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়  বিরাট  অবদান রাখছে। এই বনটি আমাদের দেশের অন্যতম বড় তিনটি নদী  গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র এই নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত।বাংলাদেশের মোট তিনটি জেলার সীমানায় এই বনটি অবস্থিত। আর এই জেলা তিনটি হলো  বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা উত্তর চব্বিশ পরগুনা এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগুনা জেলা। এই ম্যানগ্রোভ বনভূমিটিকে ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রদান করেন। এই বনটি দুই জেলায় থাকাতে ইউনেস্কো এই বনের নাম দিয়েছেন সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান। সুন্দরবনের চারদিকে জালের মতো  ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদী। মোট বনভূমির প্রায় ৩১.১ বর্গ কি.মি. জুড়ে আছে এসব নদ-নদী।


 সুন্দরবনের প্রাণীকূলের মধ্যে আছে অসংখ্য প্রজাতির পাখি, বাঘ, চিত্রাহরিণ,মহিষ, গন্ডার,কুমির
,

 সাপ, বানর এবং আরও নাম না জানা বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তবে এই বনের প্রধান আকর্ষণ হলো  রয়েল বেঙ্গল টাইগার

এক জরিপে দেখা গেছে সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা ১০৬টি এবং হরিণ আছে মোট ১০০০০০ থেকে প্রায় ১৫০০০০ টি। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান  নামে  স্বীকৃতি লাভ করে। দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসে আমাদের এই বাংলাদেশে।

এই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে সম্ভাব্য সুন্দরী গাছের নাম থেকে।এই বনের অনেকগুলো গাছের মধ্যে সুন্দরী গাছ অন্যতম।১৯০৩ সালের একটি জরিপে দেখা যায় যে এই বনে মোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি  প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে।এই সব উদ্ভিদের মধ্যে গেওয়া, গড়ান, কেওয়া,শাল, সুন্দরী ও গোলপাতা ইত্যাদি  উল্লেখযোগ্য।এই বনের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় অনেক ধরনের দামী দামী জিনিসপত্র। আর গোলপাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি তৈরি ।এই বনের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় দিয়াশালাই এর কাঠি।এই বনের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বেশির ভাগ মধু এই বন হতেই আহরণ করা হয়। এই বনের মধু বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।

এছাড়াও এই বনে মোট ৩০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে, এর মধ্যে বানিজ্যিক প্রজাতির মাছ আছে প্রায় ১২০ টি প্রজাতির,কাকড়া আছে ১২ প্রজাতির এবং শামুক আছে মোট ৯ প্রজাতির। এই মাছ বিদেশে রপ্তানী করে  প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। সুন্দরবনের এ্ই মৎস্য সম্পদকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়।এক সময় এই বনের মাছ ৮০ শতাংশ প্রানিজ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতো।কিন্তু আশির দশকে এই বনের পোনা মাছ ধরা শুরু হওয়ার পর থেকে মাছের পরিমান ব্যাপকভাবে কমে যায়। সুন্দরবনের মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট ইত্যাদি। এক সময় এই বনে  জাভা মাছের খুব নাম শোনা যেত। এই মাছের আকার প্রায় ৫৫সেমি. পর্যন্ত লম্বা হত। কিন্তু বর্তমানে এই মাছের দেখা পাওয়াই যায় না।পায়রাতলী বা চিত্রালী মাছ জেলেদের জালে আজকাল দেখা পাওয়াই অসম্ভব। সুন্দরবনের সবচাইতে পরিচিত মাছ পারশে মাছ। প্রায় ১৬ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হয় এই মাছটি।এছাড়াও আছে মাগুর, দাগী মাগুর, বাটা বাঙান,গুল বাটা, খরুল বাঙান, খল্লা, কাইক্কা বা কাইকশেল মাছ, মেদ মাছ, গুলশা, নোনা টেংরা, শিং মাছ, কাজলী মাছ, ভোল মাছ, রেখা মাছ, কই, টাকি, শৈল মাছ, পুটি, চেলা, দাঁড়কিনা ও কুচো চিংড়ি মাছ।

এ্ই বনের জনসংখ্যা প্রায় ৪ ‍মিলিয়ন কিন্ত অধিকাংশিই স্থায়ী নয়।
আমাদের সুন্দরবন আমাদের দেশের বিরাট একটা প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই আমরা এই বনের প্রতি সদয় হই যাতে আমাদের এই বনের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলোর যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। আসুন আমরা আমাদের এই বনকে রক্ষা করি আর বনের সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করি।
লেখায় কোনো ভূলক্রূটি থাকলে জানাবেন সংশোধন করা হবে ইনশাল্লাহ।

Previous Post
Next Post

0 comments:

Thank you sharing for your comment