মেহেরপুর জেলার বিবরণ
আজকের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের খুলনা বিভাগের
অন্যতম একটি সুন্দর জেলা মেহেরপুর কে নিয়ে।
এই জেলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা। কারণ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘঠিত হয় তার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী এই মেহেরপুর জেলা। এই জেলাটি এক সময় কুষ্টিয়া জেলার মহকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তৎকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার এই জেলার বৈদ্যনাথতলায় আম্রকাননে শপথ গ্রহন করে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এবং এই মেহেরপুরকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়।
পরে ১৯৮৪ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়া জেলা থেকে এই জেলাকে
পৃথক করে নতুন জেলায় রুপ দেওয়া হয়।
মেহেরপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রাচীন
জনপদ। তবে কোন সময়ে এই প্রাচীন জনপদটি গড়ে ওঠে তা সঠিক জানা যায় নি। ধারণা করা হয় রাজা
বিক্রমাদিত্যের সময়ে এখানে এই জনপদ গড়ে উঠে। কিন্তু এ বিষয়ে ইতিহাস থেকে তেমন কোনো
প্রমাণাদি পাওয়া যায় নি।
নামকরণ: সঠিক
কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি এর নাম করণ নিয়ে। কিন্তু অনেকেই ধারণা করে থাকে মেহের আলী নামক
এক দরবেশ এই জায়গায় ইসলাম প্রচার করার জন্য এসেছিলেন। তার নামের সাথে সামঞ্জস্য ষোড়শ
শতাব্দীতে এই অঞ্চলের নাম রাখা হয় মেহেরপুরে। এলাকাটি তৈরি হবার পর থেকেই এই জায়গায়
মুসলমান শাসকের আধিপত্য ছিল। যার কারণে শুরু হতেই এই এলাকায় ইসলাম প্রচার শুরু হয় ।
আর এই জনপদের লোকদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত শুরুর দিকে পৌঁছে দেন হযরত খাঁন জাহান আলী
(রাঃ)। তিনি ভারতের আলী গৌড় থেকে ভৈরব নদ পথে এই এলাকায় আসেন। তখন তার সাথে ৩৬০ জন
দরবেশ এবং ৬০ হাজার সৈন্য ছিল বলে কথিত আছে। তিনি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত
ও পতাকা উত্তোলন করে ইসলামিক শাসক প্রতিষ্ঠা করেন এই মেহেরপুর অঞ্চলে।
মেহেরপুর জেলার অবস্থান;
বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের অন্যতম একটি সুন্দর জেলা মেহেরপুর। এই জেলাটি বাংলাদেশের পশ্চিমাংশের সীমান্তবর্তী আরকেটি জেলা। এই জেলার উত্তরে কুষ্টিয়া জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে কুষ্টিয়া জেলা ও চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলা অবস্থিত।
জেলার আয়তন, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ;
এই জেলাটি মোট ০৩টি উপজেলা এবং ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। জন।
এই জেলার সংসদীয় আসন মোট ২টি। মেহেরপুর ১ (বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের আসন নং ৭৩)- মেহেরপুর
সদর উপজেলা এবং মুজিবনগর উপজেলা, মেহেরপুর ২ (বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের আসন নং ৭৪) – গাংনী
উপজেলা। এই জেলার পোস্ট কোড ৭১০০ এবং প্রশাসনিক বিভাগীয় কোড ৪০৫৭।
মেহেরপুর জেলার মোট আয়তন ৭১৬.০৮ বর্গ কি.মি. (২৭৬.৪৮ বর্গ মাইল), এই জেলার মোট জনসংখ্যা ৬,৫৫,৩৯২ জন। জেলার আয়তন অনুসারে এই জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কি.মি.তে ৯২০ জন আর প্রতি বর্গ মাইলে ২৪০০ জন করে।
মেহেরপুর জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ৪,০৭,৫২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ
ভোটার রয়েছে ১,৯৫,৮৮৯ জন এবং নারী ভোটার
রয়েছে মোট ২,১১,৬৩৬ জন।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহ;
বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম ইতিহাস ঘেরা এই জেলা। এই জেলাটি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কালের স্বাক্ষী। এই জেলায়ই প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার
এই জেলার বৈদ্যনাথতলায় আম্রকাননে শপথ গ্রহন করে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এবং
এই মেহেরপুরকে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়। যেটি মুজিব
নগর নামেই অধিক পরিচিত। এই জেলায় অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য্য ঘেরা জায়গা,ফসলের মাঠ, নদী, নালা, দীঘি, খাল-বিল ইত্যাদি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
কিছু স্থানের নাম আপনাদের সামনে তুলে ধরছি-
১. করমদী গোসাঁইডুবি মসজিদ, ২. শিব মন্দির ভল্লবপুর, ৩. মুজিবনগর
বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী, ৪. ভবানীপুর মন্দির, ৫. বরকত বিবির মাজার, ৬. বাঘুয়াল পীরের
দরগা, ৭. ভাটপাড়া ও আমঝুপি নীলকুঠি, ৮. মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, ৯. পৌর ঈদগাহ, ১০. মেহেরপুর
শহীদ স্মৃতিসৌধ, ১১. আমদহ গ্রামের স্থাপত্য নির্দশন, ১২. স্বামী নিগমানন্দ সারস্বত
আশ্রম, ১৩. সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, ১৪. কালাচাঁদপুর শাহ ভালাই এর দরগা, ১৫. ভল্লভপুর
চার্চ, ১৬. ভবরপাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও ১৭. নায়ের বাড়ি মন্দির।এছাড়াও আরও অনেক
দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দের্য্যর বিশাল সমাহার।
আপনার চোখের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যাবে এই সব জায়গায় ভ্রমণ করলে।
মেহেরপুর জেলার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সমূহ-
এই জেলার স্বাক্ষরতার হার ৫৩.৬%।আর মেহেরপুর শহরের স্বাক্ষরতার
হার ৬৬.৩%। বাংলাদেশের স্বাক্ষরতার হার অনুযায়ী এই জেলার স্বাক্ষরতার হার একেবারেই
কম। যেখানে সারা দেশের স্বাক্ষরতার হার গড় অনুযায়ী রয়েছে ৭৬.৬৬%।
এই জেলায় মোট ৪টি সরকারী কলেজ রয়েছে, বেসরকারী কলেজ রয়েছে মোট ১২টি, কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র আছে মোট ৬টি, কলেজিয়েট স্কুল আছে মোট ৫টি, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় আছে মোট ৩টি এবং বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয় আছে মোট ১১৪টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে মোট ১১টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোট ২৯৬টি, নন রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোট ৭টি এবং মাদ্রাসার সংখ্যা মোট ৬০টি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলো হলো-
১. মেহেরপুর সরকারী কলেজ, ২. মেহেরপুর সরকারী মহিলা কলেজ,
৩. মুজিবনগর সরকারী ডিগ্রী কলেজ, ৪. গাংনী সরকারী কলেজ, ৫. মেহেরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়।
মেহেরপুর জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব;
এই জেলায় অনেক গুনী মানুষের জন্ম। যাদের অবদান জাতির জন্য
ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে আজ অব্দি দেশ ও জাতির জন্ম এরা
অবদান রেখেই চলেছেন। আসুন জেনে নেই সেই সব গুনী মানুষদের নাম সমূহ।
১. ইমরুল কায়েস- যিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়ার।
২. স্বামী নিগমানন্দ- তিনি একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ
করেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্ম সংস্কারক।
৩. এম. এ. হান্নান- মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি মরোণোত্তর
স্বাধীনতা পুরুষ্কার লাভ করেন।
৪. আব্দুল মোমিন- বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের একজন নেতা।
৫. শাহ আলম- ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি মরোণোত্তর
স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
৬. ওয়ালিল হোসেন- তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন নায়ক। তিনি
বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা।
৭. দীনেন্দ্র কুমার রায়- তিনি একজন পত্রিকা লেখক,অনুবাদক
এবং বাঙালী গ্রন্থকার।
৮. ফরহাদ হোসেন- বাংলাদেশ সরকারের একজন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
৯. আহম্মদ আলী- মেহেরপুর ১ আসনের সাবেক একজন সংসদ সদস্য।
১০. মাসুদ অরুণ- মেহেরপুর ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
১১. রফিকুর রশীদ- তিনি একজন বাঙালী লেখক, তিনি বাংলা একাডেমি
পুরুষ্কার ২০২১ ( শিশু সাহিত্য ) লাভ করেন।
১২. মোহাম্মদ সহিউদ্দিন- তিনি একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭১ সালের প্রবাসী
বাংলাদেশ সরকারের একজন সাংসদ।
এছাড়াও
আরও অসংখ্য গুনী মানুষের জেলা এটি।
আমাদের
অনান্য পোস্টগুলো পড়তে চোখ রাখুন নিচের লিংকে
আমাদের
পোস্টে যদি কোনো ভুল তথ্য থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টস করে জানাবেন। আর আপনার জানা আরও
সঠিক তথ্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন, আমরা আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই
করে আমাদের পোস্টগুলোকে আরও বেশি আপডেট এবং তথ্য বহুল করে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।
আমাদের সাথেই থাকুন এবং পোস্টগুলো লাইক, কমেন্টস করে আমাদেরকে
উৎসাহিত করুন।আমরা ভালো কিছু করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
অনেক তথ্যবহুল পোস্ট এটি। আশা করি ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন এবং নিয়মিত আপডেট করবেন।
ReplyDeleteThanks for your Advice
Delete