নিম গাছ
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষজন, গাছপালা
হতেই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করার জন্য উপায় খুঁজত। তখনকার দিনে এখনকার মত এত ওষুধ পাওয়া
সম্ভব ছিল না। মানুষ বিভিন্ন উদ্ভিদ হতে চিকিৎসা নিত। আর যে সকল উদ্ভিদের রোগ নিরাময়
ক্ষমতা আছে তাকে ভেষজ উদ্ভিদ বলা হয়। নিম গাছ তার মধ্যে অন্যতম। নিম গাছের বৈজ্ঞানিক
নাম অ্যাজাডিরাকাটা ইনডিকা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু এবং সংস্কৃত ভাষায় নিমকে নিমই বলা
হয়। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৪০০ সালে বৈদিক যুগ হতে নিমকে ঔষুধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তখন শরীর হতে জীবানু ধ্বংস করার জন্য নিম ব্যবহৃত হতো। দূষিত বায়ু এবং অনান্য কীটের
উপদ্রব হতে রক্ষা পেতেও নিমের ব্যবহার রয়েছে।
আমাদের দেশের প্রতিটি গ্রামেই
কম বেশী নিমগাছ রয়েছে। এই নিম গাছের ব্যাপক গুনাগুন রয়েছে।
নিম গাছ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ
করতে সহায়তা করে। এই নিম গাছের পাতার রস, ছাল, পাতার বড়ি মানব দেহের জন্য এক মহা ঔষুধি।
আমরা নানা অসুখে নিম গাছের ছাল ও পাতার রস খেয়ে থাকি। এই গাছের উপকারিতাকে এমনভাবে
বোঝানো হয়েছে। মানুষ কথায় কথায় বলে থাকেন উপকার করলে যে শরীরের চামড়া থাকে না নিম গাছ
তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। মানে এর এত এত উপকার মানুষ গ্রহণ করেছে এই নিম গাছ হতে,শেষ মেষ
এর ছাল তুলেও মানুষ ব্যবহার করা শুরু করেছে।
আবার বলা হয়ে থাকে বাড়ির দক্ষিণ
পাশে যদি একটি নিম গাছ থাকে, তবে সেই বাড়িতে নাকি রোগ বালাই কম হয়ে থাকে।
নিম গাছের ছালের ব্যবহার-
নিম গাছের ছাল ম্যালেরিয়া,ব্যাথ্যা,
চর্মরোগ, পেট ও অন্ত্রের আলসার ও জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার হতে থাকে।
নিম পাতার ব্যবহার-
নিম পাতারও নানবিধ ব্যবহার রয়েছে;
তারমধ্যে চোখের রোগ, কৃমি, খিদে কমে যাওয়া,কুষ্ঠরোগ,পেট খারাপ, রক্তাক্ত নাক, ত্বকের
আলসার, মাড়ির সমস্যা,লিভারের সমস্যা,হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীর রোগ,পেট খারাপ, ডায়াবিটিস
ও জ্বর হলে নিম পাতার ঔষুধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
নিম ফুলের ব্যবহার-
নিম ফুলের ব্যবহার অনেক, নিম
ফুল পিত্ত কমাতে ও কফ নিয়ন্ত্রনে বেশি কাজে লাগে।
নিম ফলের ব্যবহার-
নিম ফলেরও ব্যবহার ব্যাপক এটি
অর্শ্ব রোগ, কৃমি,মূত্রনালীর রোগ,শরীরে ক্ষত এবং কুষ্ঠ রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও
যেকোনো বয়সে স্বপ্নদোষের সমস্যা
হলে ২৫-৩০ ফোটা নিমের ছালের রস কাঁচা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
শরীরের মধ্যে চুলকানী থাকলে নিমের
শুকনা পাতা তেলে ভেজে ভাতের সাথে কিছুদিন খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
আবার মাত্রাতিরিক্ত বমি হলে ৫-৭
ফোটা নিম পাতার রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে বমিভাব কেটে যায়।
এক কথায় নিম গাছের সব কিছুই ঔষুধি
হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি আমাদের অনেক ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে। সুতরাং নিম
গাছের তুলনা অতুলনীয়।
দৈনন্দিন জীবনের নিম গাছের ব্যবহার-
আমরা নিম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত
মেসওয়াক করে থাকি। এটি আমাদের দাঁতের মাঁড়ি ও দাঁতের জন্য বিশেষ উপকারী।
ব্রাশের পরিবর্তে আমরা নিমের
ডাল ব্যবহার করি, এতে করে আমাদের আর্থিক সাশ্রয় হয়ে থাকে।
তবে অনেক সময় নিমের ডাল ছত্রাক
দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তখন আমাদের দাঁতের মাঁড়ি ও ঠোঁটের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে।
কাজেই এটি ব্যবহার করার সময় আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
আবার নিমের তেল কুষ্ঠ রোগ ও কৃমির
জন্য অনেক ভালো কাজ করে থাকে।
নিমের বহুবিদ ব্যবহারের মাঝে
আবার প্রয়োজনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই একটি গাছে
এত পরিমাণ সুবিধা পাওয়ার ফলে আমরা যেন অতিরিক্ত ব্যবহার না করি। এতে করে ভালোর চাইতে
মন্দই বেশি হবে।
নিমের অনান্য ব্যবহার-
রোগ বালাই বাদেও এই নিম গাছের
কাঠ আমরা ব্যবহার করতে পারি। আমাদের বাড়ির আসবাপত্র, বিছানা, চেয়ার-টেবিল, ঘর-বাড়ি
নির্মাণে এবং রান্নার কাঠ হিসেবেও নিম গাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
নিমগাছ আমাদের পরিবেশে ভারসাম্য
রক্ষা করে থাকে। আমাদের ছায়া দেয়, নির্মল বায়ু পাই আমরা এই গাছের পাশ থেকে।
সুতরাং আমাদের সকল সচেতন নাগরিকের
উচিত অন্তত একটি করে নিম গাছ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করা।
আরও পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
ঝিনাইদহ জেলার পরিচিতি
বাগেরজহাট জেলার পরিচিতি
মাগুরা জেলার পরিচিতি
নওগা জেলার পরিচিতি
আমাদের ওয়েব সাইটে যদি কোনো প্রকার
তথ্য ভুল থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টস করে জানাবেন। আপনার মতামত আমরা যাচাই করে আমাদের
পোস্টটি সংশোধন করব।
এছাড়াও আরও বেশি পরামর্শ দরকার,
আপনার জানা তথ্য এবং পরামর্শ দিয়ে আমাদেরকে উৎসাহিত করুন।
আমরা তথ্যবহুল আলোচনা করার চেষ্ট
করি।
আমাদের পোস্টগুলো ভালো লাগলে
আমাদের সাথেই থাকবেন।
ধন্যবাদ।