Monday, October 23, 2023

কুড়িগ্রাম জেলা

কুড়িগ্রাম জেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

কুড়িগ্রাম জেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ;

আজকে আমি আপনাদের সামনে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম জেলাকে নিয়ে আলোচনা করব।

কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা, পশ্চিমে লালমনিরহাট ও রংপুর জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলা এবং পূর্বে  ভারতের আসাম অবস্থিত।

কুড়িগ্রাম জেলাটি বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রশাসনিক জেলা।

কুড়িগ্রাম জেলাটি দরিদ্র একটি জেলা, এই জেলাটি সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ার কারণে এই জেলায় তেমন কোনো বড় বড় শিল্পকারখানা নেই। এই এলাকার মানুষের প্রধান কাজ কৃষি।

বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজ করেই তারা সংসার চালায়।

এই জেলার নামকরণ নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্যসূত্র পাওয়া যায় নি।

কুড়ি্গ্রাম জেলার পরিচিতি


তবে লোকমুখে কথিত আছে মহারাজা বিশ্ব সিংহ সেই অঞ্চলের ২০টি জেলে পরিবারকে উচ্চ শ্রেণীর হিন্দু পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেই অঞ্চলে প্রেরণ করে ছিলেন। আর সেই ধারণা থেকেই এই এলাকাকে কুড়িগঞ্জ নাম করণ করা হয়।

এই জেলাটি ১৮৭৫ সালের ২২ এপ্রিল এটি একটি মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এবং পরবর্তীকালে ১৯৮৪ সালে এটিকে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তখন এই মহকুমার নাম পরিবর্তন করে নাম প্রদান করা হয় কুড়িগ্রাম।

কুড়িগ্রাম জেলার মোট আয়তন ২২৪৫.০৪ বর্গ কি.মি.। কুড়িগ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যা ১৮,০১,৩৫৬ জন। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৯,০৫,৯৪৪ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮,৯৫,৪১২ জন ২০১১ সালের আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী।

এই জেলার পোস্ট কোড ৫,৬০০ এবং প্রশাসনিক  বিভাগের কোড ৫,৫৪৯।

এই জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১০,৮১,১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৫,৪১,৮৯৫ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৫,৮১,০৬২ জন। উপরোক্ত জরীপ হতে দেখা যায় পুরুষ ভোটার সংখ্যার চাইতে নারী ভোটার সংখ্যার পরিমাণ বেশী।

এই জেলাটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় এই জেলার স্বাক্ষরতার হার অনেক কম।স্বাক্ষরতার হার মোট জনরসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ।

কুড়িগ্রাম জেলার প্রশাসনিক অঞ্চলঃ

কুড়িগ্রাম জেলাটি মোট ০৯টি উপজেলা এবং ১১টি থানা নিয়ে গঠিত। এই জেলায় মোট ০৩টি পৌরসভা রয়েছে এবং ৭২ টি ইউনিয়ন পরিষদ আছে এবং ১৮৭২ টি গ্রাম রয়েছে।

এই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজেলাটির নাম হলো উলিপুর উপজেলা। মোট জেলার প্রায় ২২% জায়গা নিয়ে এই উপজেলাটি গঠিত।

কুড়িগ্রাম জেলার পরিচিতি


কুড়িগ্রাম জেলার ০৯ উপজেলার নামগুলো হলোঃ

১. উলিপুর উপজেলা, ২. কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, ৩. চিলমারী উপজেলা, ৪. চর রাজিবপুর উপজেলা, ৫. নাগেশ্বরী উপজেলা, ৬. ফুলবাড়ী উপজেলা, ৭. রাজারহাট উপজেলা, ৮. ভুরুঙ্গামারী উপজেলা এবং ৯. রৌমারী উপজেলা।

প্রতিটি উপজেলাই একটি করে থানা এবং নাগেশ্বরী উপজেলায় কচাকাটা নামে একুটি থানা ও  চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের ঢুষমারা একটি থানা।

এই দুইটি অতিরিক্ত থানা নিয়ে মোট ১১ থানা এই কুড়িগ্রাম জেলায়

কুড়িগ্রাম জেলার মোট সংসদীয় আসন সংখ্যা ০৪টি।

আর আসন গুলো হলো ১. নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী মিলে কুড়িগ্রাম-১ আসন,

২. রাজারহাট,কুড়িগ্রাম সদর, ফুলাবড়ী মিলে কুড়িগ্রাম-২ আসন,

৩. উলিপুর উপজেলা কুড়িগ্রাম-৩ আসন,

৪. চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর মিলে কুড়িগ্রাম-৪ আসন।

 

কুড়িগ্রাম জেলা পরিচিতি

কুড়িগ্রাম জেলার প্রধান অর্থনীতি কৃষি। এই এলাকায় ধান,পাট, ভুট্টা,পিয়াজ, তামাক, ‍সরিষা, সুপারী, গম, বাঁশ, আঁখ, বাদাম, কাউন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই এলাকার মোট আবদী জমির পরিমান ২,৫৯,৬০৮.২১ একর।এছাড়াও ছোট,বড়, মাঝারী কিছু শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৯৩টি। এর মধ্য ছোট প্রতিষ্ঠান ৮৬২ টি, মধ্যম প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট ২৭টি এবং বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট ০৪টি।

কুড়িগ্রাম জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ নিয়ে ‍নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো।

আমি আগেই উপরে বলেছি এই জেলার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৬% লোক শিক্ষিত।এই জেলার জন্য সরকারীভাবে একটি মাত্র সরকারী গ্রন্থাগার রয়েছে।আর এই গ্রন্থাগারের অবস্থানটি শহরের প্রাণ কেন্দ্র কলেজ মোড়ে অবস্থিত।

 

কুড়িগ্রাম জেলা পরিচিতি

এই জেলার সুনামধন্য ‍শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলো হলো।

কুড়িগ্রামে মোট ৬৪টি সরকারী এবং বেসরকারী কলেজ রয়েছে। মোট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২৬৬ এবং মাদ্রাসা আছে মোট ২৩৮টি।

উল্লেখযোগ্য কলেজ সমূহের নাম গুলো হলোঃ

১. কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ, ২. কুড়িগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজ, ৩. উলিপুর সরকারী কলেজ, ৪. রৌমারী সরকারী কলেজ, ৫. রাজিবপুর সরকারী কলেজ, ৬. নাগেশ্বরী সরকারী কলেজ, ৭. চিলমারী সরকারী কলেজ, ৮.ভুরুংগামারী সরকারী কলেজ এবং ৯. ফুলবাড়ী সরকারী কলেজ।

কুড়িগ্রাম জেলার সুনামধন্য কিছু উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের নাম ‍নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১. কুড়িগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ২. রাজিবপুর সরকারী ‍পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ৩. তিলাই উচ্চ বিদ্যালয় ভুরুংগামারী, ৪. নাগেশ্বরী কামিল (এমএ) মাদ্রাসা, ৫. ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ৬.উলিপুর এমএস স্কুল এন্ড কলেজ, ৭.নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী, ৮.এইলি মডেল স্কুল ঘড়িয়ালডাঙ্গা রাজারহাট,৯. সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়, ১০. উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড মহাবিদ্যালয়, ১১. কুড়িগ্রাম কামিল (এমএ) মাদ্রাসা, ১২. ভুরুংগামী পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ১৩. মীর ঈসমাইল হোসেন ‍ডিগ্রি  কলেজ, ১৪. নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমী ও ১৫. ভুরুংগামী নে/উ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

১.বোয়ালমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এছাড়াও জেলায় মোট ৫৬৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫৪৫টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলায় বিভিন্ন ধর্মের লোকজনের বসবাস। তাই এই জেলায় মসজিদ, মন্দির ও গীর্জা রয়েছে।

এই জেলায় মোট মসজিদ আছে ৩৪৯৩টি, মন্দির আছে মোট ১৮০টি এবং গীর্জা আছে মোট ০৩টি।

কুড়িগ্রাম জেলার যোগাযোগ মাধ্যম  হিসেবে সড়কপথ এবং রেলপথ এবং নদীপথ রয়েছে।

২০১৯ সালের ১৬ই অক্টোবর থেকে এই জেলায় রেল যোগাযোগ রয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে সেমি নন স্টপ রেল কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস চালু রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা পরিচিতি


কুড়িগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহঃ

কুড়িগ্রাম জেলায় অনেক সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই জেলায় প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট কৃত্রিম অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা আপনাকে মনোমুগ্ধ করবেই।এগুলো হলোঃ

১. প্রথম আলো চর, ২, শাপলা চত্তর কুড়িগ্রাম, ৩. পাঙ্গা জমিদার বাড়ি, ৪. কোটেশ্বর শিব মন্দির, ৫.শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক, ৬. উত্তরবঙ্গ জাদুঘর নতুন শহর, ৭. চান্দামারী মসজিদ, ৮. দাশেরহাট কালি মন্দির, ৯. বিজয়স্তম্ভ (স্টেডিয়াম সংলগ্ন ), ১০. কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার ( মজিদা কলেজ ), ১১.  সোনাহাট স্থল বন্দর ভুরুঙ্গামারী উপজেলা, ১২. ধরলা সেতু, ১৩. ধরলা সেতু -২ ফুলবাড়ী উপজেলা, ১৪. ঘোষপাড়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক, ১৫. ঘড়িয়ালডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, ১৬. টুপামারী ‍জিয়াপুকুর, ১৭. চাকির পাশার বিল, ১৮. চিলমারী বন্দর, ১৯. তুরা বন্দরে রৌমারী উপজেলা, ২০. রাজিবপুর সীমান্ত হাট, ২১. আমতলি সর্বজনিন দূর্গামন্দির রাজারহাট, ২২. নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, ২৩.ভেতরবন্দ জমিদারবাড়ী,

২৪. ফুল সাগর, ২৫. জালাল পীরের দর্গা, ২৬. উদুনা-পুদুনার বিল, ২৭. বেহুলার চর, ২৮. ধামশ্রেনী মন্দির,

২৯. ৪২০টির অধিক চর অঞ্চল, ৩০. টগরাইহাটের অচিন গাছ, ৩১. জেলার ১৬টির নদ-নদী, ৩২.দাশিয়ারা ছড়া (সাবেক ছিট মহল) ও ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ।তাছাড়াও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। অনান্য জেলার চাইতে এ জেলায় আপনি ঘুরতে গেলে প্রাকৃতিক অনেক কিছু দেখতে পারবেন।

মাটি ও মানুষের সাথে আপনি মিশতে পারবেন। আপনি স্বচক্ষে দেখতে পারবেন গ্রামীণ জীবন। গ্রামীণ জীবন কতটা বৈচিত্রময় তা এইসব জায়গায় গেলেই কেবল আপনি অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।

সুতরাং আপনি যদি আমাদের এই সোনার বাংলাকে জানতে, দেখতে, শুনতে চান তবে আপনাকে সারা বাংলা ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ রইল।

 

আর এই পোস্টে যদি কোনো ধরনের ভুল তথ্য থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে  জানাবেন।

আশা করি আপনার দেওয়া সঠিক তথ্যটি আবার নতুন করে সংযোজন করা হবে।

আর আপনার এলাকায় কি কি আছে তা অবশ্যই আমার পোস্টে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

পরবর্তীতে আপনার জেলা নিয়ে আবার নতুন কোনো পোস্ট লিখব ইনশাআল্লাহ।

 আরও পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুণ;

যশোর জেলার পরিচিতি
গাইবান্ধা জেলার পরিচিতি
মানিকগঞ্জ জেলার পরিচিতি
রংপুর জেলার পরিচিতি
কুষ্টিয়া জেলার পরিচিতি
ময়মনসিংহ জেলার পরিচিতি


 

Previous Post
Next Post

0 comments:

Thank you sharing for your comment