মাসদার সিটি যে শহরে কোনো বিদ্যুৎ নেই
আজকে আমরা জানব বিশ্বের মধ্যে এমন একটি শহর বা সিটি আছে যেখানে কোনো বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটি নেই। তার সাথে সাথে আবার নেই গাড়ীর জ্বালানী তেল,গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল, নেই কোনো কার্বন, নেই কোনো জ্বালানী তেলে চালিত গাড়ি, নেই কোনো দূষণ। এই শহরে গেলে আপনার মনে হবে আপনি পৃথিবীরর বাইরে কোথাও আছেন। কারণ যেখানে সারা বিশ্বে বিদ্যুৎ আর গাড়ীর জ্বালানী তেল এর বিকল্প কোনো কিছুই আপাতত সময়ে নেই। সেখানে এই মাসদার শহরে মানুষ কিভাবে এগুলো ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। মাসদার সিটি এতটাই পরিছন্ন, পরিবেশ বান্ধব, বিশাল উন্নত শহর। সেখানে জিরো কার্বন।
এখানে কোনো কার্বন নিঃস্বরণ হয় না। তাই নেই কোনো পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ সব চাইতে বিশুদ্ধ। শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করার সকল ব্যবস্থা রয়েছে এই মাসদার সিটিতে। বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য এই শহরে রয়েছে অনেক বড় উইন টাওয়ার। যেটা প্রাকৃতিক বিশুদ্ধ বাতাস শহরের মধ্যে ফিল্টারিং এর মাধ্যমে প্রবেশ করায়। নির্মল বায়ুর শহর এই মাসদার সিটি। হাজার হাজার মানুষ এই শহরে বাস করে অথচ তাদের নেই কোনো গাড়ি।
কারণ বর্তমান বিশ্বের গাড়ি এই শহরে চলাচল নিষিদ্ধ। মাসদার সিটিতে নেই কোনো ফুয়েল পাম্ব। আপনি এই শহরে ভ্রমণ করতে গেলে আপনার তেলে চালিত গাড়িটিকে শহরের বাইরের পার্কিং করে রেখে শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সেই শহরের বাইরের তাপমাত্রা এই শহরের ভেতরের চাইতে অনেক বেশি। কিন্তু মাসদার সিটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে। বিশ্বে এটিই প্রথম শহর। আর দ্বিতীয় আরেকটি এই্ রকমের শহর তৈরী করেছেন চীন।
তো চলুন আমরা
সেই শহরের সুবিধা এবং এর যাবতীয় রহস্য যেনে নিই।
শহরটি যেখানে অবস্থিত
এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে বিশেষভাবে তৈরী করা একটি শহরটি । এই শহরে চলে ইলেকট্রিক গাড়ি, স্কুটা ও অটো। এগুলোকে কোনো বৈদ্যতিক লাইন থেকে চার্জ করা হয় না। এই গাড়িগুলো চার্জ হয় সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে। এই সিটির প্রতিটি বাড়ির ছাঁদে বসানো আছে সোলার প্যানেল। যেগুলো থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সূর্য্য হতে শক্তি উৎপন্ন হয়ে পুরো শহরের ইলেকট্রিসিটির চাহিদা মেটানো হয়। এই কারণে এই শহরে ফুয়েল বা তেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার প্রয়োজন পড়ে না। আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে এরা তেল বা পরিবেশ দূষণকারী কোনো ধরনের জিনিসপত্র ব্যবহার করে না। অথচ তারা সারা বিশ্বে জ্বালানী তেল রপ্তানী করে বিশ্ব বাজার চালাচ্ছে।
এরা বুঝে গেছে আগামীর আধুনিক পরিবেশ বান্ধব নগর গড়তে প্রাকৃতিক শক্তির বিকল্প নেই। তাই তারা এই মাসদার নামক সিটিটি গড়ে তুলেছে। এই শহরে নিয়মিত রান্না হচ্ছে, ফ্যান চলছে, এসি চলছে, টিভি চলছে, এক স্থান হতে আরেক স্থানের যাতায়াতের জন্য গাড়িও চলছে সব সময় শুধুমাত্র সূর্য্য থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। আর সূর্য্য হলো পৃথিবীর একমাত্র নবায়নেযোগ্য শক্তির উৎস। যা কখনও শেষ হবে না। তাই এই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে সারা বিশ্ব আবার সুন্দর ও সুস্থ একটা পৃথিবী পাবে।
আমরা প্রতিনিয়ত জ্বালানী তেল পুরিয়ে পৃথিবীতে কার্বন উৎপন্ন করছি। যা আমাদের বসবাসের এই পৃথিবীকে ক্রমেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আর সেখানে এই আধুনিক মাসদার শহরে জিরো কার্বন। শহরের প্রতিটি বিল্ডিং, অফিস, আদালত,ইউনিভার্সিটি, রেস্টুরেন্ট ও বাসাসহ সকল কিছু পরিচালিত হচ্ছে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে।
বিশ্বের সবচাইতে সাস্টেইনএবল সিটি বলা হচ্ছে বর্তমানে এই মাসদার সিটিকে।
সারা
শহর জুড়ে রয়েছে সবুজ গাছপালা। গাছপালাগুলো এই শহরে নতুন রুপ দিয়েছেন। রয়েছে বিশ্বের
প্রথম আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলেজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইউনিভার্সিটি। আগামীর পৃথিবী
কেমন হতে যাচ্ছে তা দেখতে এবং জানতে চাইলে আপনি এই মাসদার শহরটি ঘুরে অভিজ্ঞতা নিতে
পারেন।
এই শহরের প্রতিটি নির্মানশৈল অত্যাধুনিক কৌশলে নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই সব দালান। অসাধারণ কারুকার্য আর নির্মাণ এই শহরকে দিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং সেরা একটি লুক। যা আপনি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। প্রতিটি বিল্ডিং এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে বাহির হতে অতি সহজেই ভেতরে আলো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস চলাচল করতে পারে। যাতে অক্সিজেনের অভাব না হয়।
এই শহরে ড্রাইভার বিহীন গাড়ি নামানো হচ্ছে। যার থাকবে না কোনো ড্রাইভার। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বা অটোনোমাস ড্রাইভিং সিস্টেমে গাড়ি আপনাকে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে।
২০০৮ সাল থেকে এই সিটির প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। এই শহরের মাঝখান দিয়ে থাকছে যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেল এবং একপাশে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট। যা পুরো শহরের শক্তির উৎপাদন কেন্দ্র।
আর তাছাড়া প্রতিটি বাড়ির ছাঁদের মধ্যতো সোলার প্যানেল থাকছেই। আবুধাবির তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে যা বিশ্বের অন্যসব দেশের রেকর্ড ভেঙ্গে
0 comments:
Thank you sharing for your comment